“শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড” কথাটি সর্বজন স্বীকৃত। অন্য দিকে জাতীয় জীবনে সার্বিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত শিক্ষা। বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে খ্রিস্টান মিশনারীগণ প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। মিশনারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে শিক্ষার আলো বিতরণ করে চলছে। ত্রিশের দশকে জীবন ও জীবিকার তাগিদে এতদ অঞ্চলে খ্রিষ্ট ধর্মালম্বিদের বসবাস শুরু হয়। অত্র এলাকায় তেমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় প্রয়াত ফ্রান্সিস গমেজ স্ব-উদ্যোগে নিজ বাড়ির আঙিনায় গুটিকতক ছেলে-মেয়েকে পড়াতে শুরু করেন। প্রয়াত ফ্রান্সিস গমেজের উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং স্থানীয় চাহিদার গুরুত্ব বিচার করে স্বর্গীয় ফা: কার্নেভেল্লী ও ফা: থোমাস কাত্তানেয় স্থানীয় লোকদের সহযোগিতায় বনপাড়াতে ১৯৩০ খ্রি: একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ”সেন্ট যোসেফস্ প্রাথমিক বিদ্যালয়” নামে পথ চলতে শুরু করে। ধীরে ধীরে খ্রিস্টান মিশনারী কর্তৃক অসাস্প্রদায়িক চেতনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অত্র এলাকার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়। সেন্ট যোসেফের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছর পর ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাথমিক থেকে উন্নিত করে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্র ভর্তি করা হয়। অত:পর ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক ৯ম শ্রেণিতে পাঠদান অনুমতি পায় এবং ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ১২ জন ছাত্র-ছাত্রি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ হতেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখা পৃথকভাবে চলতে থাকে। এসময়ে ফা: ভেরপেল্লী ও ফা: চেসকাতোর প্রচেষ্টায় সেন্ট যোসেফস্ উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য বনপাড়া মিশন প্রাঙ্গনে একতলা পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। ফা: বেরেত্তা ও ফা: বাইও জিওবান্নী-এর প্রচেষ্টায় ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান মূল ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে কাজ সমাপ্ত হয়। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ১৯ মার্চ বিদ্যালয়টি পুরতন ভবন হতে নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হয়।
রাজশাহী ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মপ্রদেশের অধিন্যস্ত নাটোর জেলার বনপাড়া পৌরসভায় অবস্থিত, বনপাড়া মিশনের ধর্মপ্রদেশীয় ফাদারদের দ্বারা পরিচালিত একটি স্বানামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর হতেই প্রতিষ্ঠানটি অত্র এলাকার মানুষের শিক্ষা ও সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে। দর্শন: “শিখ ও সেবা কর”। শিক্ষা ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে মানুষ গড়ার মধ্য দিয়ে আমরা এই দর্শনকে বাস্তব রূপ দিতে বদ্ধ পরিকর। লক্ষ্য: শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক, মানবিক, নৈতিক, কর্মমুখি শিক্ষা ও আদর্শের মাধ্যমে তাদের ব্যাক্তিত্বের বিকাশ ও উৎকর্ষ লাভ সহায়তা দান এবং জীবন প্রতিষ্ঠায় যুগোপোযুগি দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়। আদর্শ মানুষ ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা এবং পেশাগত জীবনে দক্ষতা লাভের পথে এগিয়ে দেয়া;যেন ভবিষ্যতে তারা হয়ে উঠে পরিবার, দেশ ও দশের কল্যানে অগ্র-পথিক।
প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত সম্পদ: শিক্ষার্থীবৃন্দ, দক্ষ, সৃজনশীল, ও অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলী এবং সু- বিশাল প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গন ও পরি-কাঠামো।
শিক্ষা – সেবার ধরণ:
সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ স্কুল এন্ড কলেজ একটি বৃহৎ শিক্ষা পরিবার। যেখানে পরিচালনা কমিটি, প্রশাসনিক (প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ শাখার মধ্যে), সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুবিন্যস্ত ও অন্ত:কার্যক্রমিক সুসম্পর্ক।
প্রতিষ্ঠান প্রধান বা অধ্যক্ষের পরিচালনা, প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধান ও বাস্তবায়নে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শাখার ইনচার্জগণ আন্তরিকতার সাথে কাজ করে থাকেন।
শিক্ষার পাশাপাশি আনুষাঙ্গিক সহ -শিক্ষা ও ক্লাব কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বৃদ্ধিবৃত্তিক, মানবিক, নৈতিক, আধ্যাত্বিক ও কর্মমুখীসহ জীবনের সার্বিক উৎকর্ষতা লাভে সহায়তা করা এবং ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠা লাভে যুগোপোযুগি দিকনির্দেশনা প্রদান করা।
দীর্ঘ ৫২ বছর পর শিক্ষার আলো আরো প্রসারিত করার লক্ষ্যে এবং অত্র এলাকার দরিদ্র ও নৃ-গোষ্ঠি যারা শহরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম নয় তাদের কথা চিন্তা করে রাজশাহী ধর্ম প্রদেশের শিক্ষা কমিশন এবং রাজশাহীর ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও আর্থিক সহায়তায় এবং ফা: লাজারুশ রোজারিও’র পরিচালনায় ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে কলেজ ভবন নির্মাণ শুরু হয় এবং ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই রাজশাহীর ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলেজ শাখার উদ্বোধন করেন।
প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ সুনামের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। রাজশাহী ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও’র পরামর্শে এবং নির্দেশনায় সেন্ট যোসেফস্ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মাধ্যমিক শাখার সাথে যুক্ত করা হয়।
নিয়ম- শৃঙ্খলা, প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, শ্রেণিকক্ষে সর্বোচ্চ পাঠদান ও শিক্ষার্থী উপস্থিত নিশ্চিতকরণ, নিয়মিত কুইজ, মূল্যায়ন , দুর্বল ছাত্রদের সহায়তা করা, অভিভাবকদের সাথে সাক্ষাৎ, প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরে ক্যান্টিন ব্যবস্থা, দ্রুত ও স্বচ্ছ দাপ্তরিক কাজ, শিক্ষা বৃত্তি লাভে সহায়তা দান , অনাকাঙ্খিত সমস্যায় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকাসহ আরও অনেক গঠন ও কল্যাণমূলক কাজের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অত্র এলাকায় একটি অনন্য স্থান করে নিয়েছে।
ব্যাপক শিক্ষার্থী চাপ, কিন্তু কেন?
একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে, সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে একটি শৃংখলার মধ্যে থেকে, একই শিক্ষা ও পরিবারের আদর্শ ধারণ করে, শিশু শিক্ষা হতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করে, ভবিষ্যতে একজন শিক্ষিত ও প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে উঠার নিশ্চিত প্রত্যাশা নিয়ে সকল অভিবাবকগণ দূর-দূরান্ত হতে তাদের সন্তানদেরকে সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ-এ ভর্তি করান।
আমাদের এম্বাসেডর:
প্রচার নয়, সেবা ও মানুষ গড়াই আমাদের কাজ। শিক্ষার্থী ও অবিভাবকগণই সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ পরিবারের প্রতিনিধি হিসাবে তাদের জীবনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কথা বলেন। এ যেন সকলের অহংকার ও পরিচয়।