stjosephbon123915@gmail.com

স্বপ্ন ও এগিয়ে চলা

(সাক্ষাৎকার প্রদানে ড. ফাদার শংকর ডমিনিক গমেজ, অধ্যক্ষসেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ, বনপাড়া এবং তা গ্রহণ করেছেন ময়ূখ প্রতিনিধি)

ময়ূখ: শুভ সকাল ফাদার।
অধ্যক্ষ: শুভ সকাল।

ময়ূখ: আমরা ময়ূখ প্রকাশনার পক্ষ থেকে আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই…যদি সময় দিতেন!
অধ্যক্ষ: অবশ্যই সময় দিবো। বসো এখানে…।

ময়ূখ: ধন্যবাদ।
অধ্যক্ষ: আচ্ছা কি বিষয়ে কথা বলবো…বলো দেখি।

ময়ূখ: ফাদার, সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ তো একটি ক্যাথলিক মিশনারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের অন্যান্য মিশনারি প্রতিষ্ঠানের ন্যায় এর কিছু নিজস্বতা বা নৈতিক মূলবোধ রয়েছে। সে দিকগুলো সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন…!
অধ্যক্ষ: সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ একটি কাথলিক মিশনারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অবশ্যই এর নিজস্বতা বা নৈতিক মূল্যবোধ রয়েছে। প্রথমতঃ এটি সার্বজনীন শিক্ষালয়। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ এখানে শিক্ষা লাভ করে। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে ভালবেসে সৃষ্টি করেছেন। তাই সবার উপর মানুষ সত্য, তার উপর নাই। সব ধর্মের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখে এখানে ভাল মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা দেওয়া হয়। পুথিগত শিক্ষার চেয়ে মানবিক মুল্যবোধে মানুষ হওয়ার শিক্ষাই বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই শুধু সার্টিফিকেটধারী নয়, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হলো ভাল মানুষ এবং সুনাগরিক হওয়া যেন সব যোসেফাইটগণ দেশ ও দশের প্রতি তাদের নৈতিক দায়িত্ব ভাল ভাবে পালন করে। দ্বিতীয়তঃ শিক্ষকগণ তাদের জীবনাদর্শ দিয়ে শিক্ষা দেন যেন শিক্ষার্থীরা দৃষ্টান্ত দেখে শিখতে পারে। শিক্ষকগণ একজন দায়িত্বশীল ও নৈতিক গুণসম্পন্ন। উনারা চান তাদের শিক্ষার্থীরাও যেন দায়িত্বশীল হতে শিখে। তাছাড়া এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মানুবর্তিতা, সহশিক্ষা কার্যক্রম, ক্লাব কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয় সুন্দরভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়। জাতীয় দিবসসমূহ যথাযথ মর্যাদার সহিত উদ্যাপন করা হয় এবং বিজ্ঞানমেলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনষ্ক ও সংস্কৃতিমনা করে গড়ে তোলা হয়। বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করে তাদের শরীরচর্চা করানো হয়। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সহিত সুনাম অর্জন করে। তাছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করে ধর্মীয় মূল্যবোধ গঠণ করা হয়। অর্থাৎ সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষার্থীদের সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ গঠন দিয়ে শিক্ষার্থীদের সুন্দর মানুষে পরিণত করে।

ময়ূখ: আপনি তো একজন খ্রিস্টান ধর্মযাজক বা ফাদার। এই বিশেষ আত্ম-নিবেদনের জীবনে দেশে-বিদেশে আপনাদের অনেক গঠন-প্রশিক্ষণ ও শিক্ষালাভ করতে হয়। এক্ষেত্রে আপনার শিক্ষা, আদর্শিক দিক, শিক্ষা সেবা চলমান রাখার জন্য অত্রশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, শিক্ষা কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের জীবন গঠনে আপনার চিন্তাধারা, দর্শন ও কর্ম প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমরা কিছুটা জানতে চাই…যদি সহভাগিতা করতেন!

অধ্যক্ষ: এখানে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। আমি নিশ্চয়ই চেষ্টা করবো প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে কিছু ধারণা দিতে।
 এক্ষেত্রে প্রথমেই যাজকীয় জীবন সম্পর্কে কিছু বলি। যাজকীয় জীবন হলো সেবার জন্য উৎসর্গীকৃত ও সংসারত্যাগী জীবন এবং মানুষকে ভালবাসার মুলমন্ত্রে দীক্ষিত একজন মানুষ যাজক বা ফাদার হয়। তাই সকল যাজকগণ মনে-প্রাণে চেষ্টা করেন তার জীবনাদর্শ ও ভালবাসা দিয়ে মানুষকে সৎপথে পরিচালনা করা যেন মানুষ কখনো বিপথে না যায় বরং সৎপথে থেকে ভাল মানুষ হয়।
 শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা ও ব্যবস্থাপনায় থাকা সত্যিই একটি কঠিন কাজ। তবে সবাই মিলে কাজ করলে কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়। আমরা যারা যাজক বা ফাদার, তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যেন আমরা যে কোন প্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠার সহিত কাজ করতে পারি। এজন্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় গুণ হলো নেতৃত্ব দেওয়ার কৌশল জানা। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সবাইকে নিয়ে কাজ করার মন-মানষিকতা থাকা বা সবার মঙ্গলের জন্য কাজ করা।
 বর্তমানে নতুন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করি শিক্ষা কার্যক্রম যেন চলমান থাকে এবং সুন্দরভাবে চলে। শিক্ষাবর্ষ শুরু থেকে শেষদিন পর্যন্ত শিক্ষকগণের সহায়তায় শিক্ষা কার্যক্রম সুন্দরভাবে চলার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যপুস্তকের সব বিষয়বস্তু পড়ানো হয় এবং পড়ানোর পাশাপাশি কুইজ পরীক্ষা, অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা, নির্বাচনী পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া সহশিক্ষা কার্যক্রম চলমান আছে। এতে শিক্ষার্থীরা খুবই উপকৃত হয় এবং পড়াশোনা করার জন্য আগ্রহী হয়।
 শিক্ষার্থীদের জীবন গঠন আমাদের প্রধান অঙ্গীকার। আমরা শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করি। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় ও ধর্মীয় দিবস উৎযাপন করি যেন শিক্ষার্থীরা নৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে বেড়ে উঠে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের মুলমন্ত্র হলো শৃঙ্খলা আমাদের অহংকার, সেবা আমাদের ধর্ম।

ময়ূখ: সেন্ট যোসেফস্ এখন শুধুমাত্র আর একটি স্কুল বা কলেজ নয়। শিশু শ্রেণি হতে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলে। যা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ এই তিনটি শাখা বা পর্যায়কে একই ক্যাম্পাস ও প্রশাসনিক কাঠমোতে মাধ্যমিক শাখা আর একজন ফাদার ও প্রাথমিকের জন্য একজন সিস্টারকে ইন্চার্জ হিসাবে সাথে নিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। এ বৃহৎ শিক্ষা পরিবারের প্রশাসনিক, শিক্ষা ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আপনার সময়েই এ নতুন ধারার সূচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কিভাবে তিনটি সেকশনের মধ্য একটি সেতুবন্ধন তৈরি করে কাজ করে যাচ্ছেন? আর এর মধ্য দিয়ে একটি খ্রিস্টান মিশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে আপনি কি ধরনের প্রাপ্তি প্রত্যাশা করেন?

অধ্যক্ষ: সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ যা শিশু শ্রেণি হতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চলে। এখানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ এই তিনটি শাখা রয়েছে এবং একই ক্যাম্পাস ও প্রশাসনিক কাঠমোতে মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের জন্য ইন্চার্জ হিসাবে আর একজন ফাদার ও একজন সিস্টারকে সাথে নিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। এ বৃহৎ শিক্ষা পরিবারের প্রশাসনিক, শিক্ষা ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এই সময়ে এ নতুন ধারার সূচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় তিনটি সেকশনের মধ্য একটি সেতুবন্ধন তৈরি করে কাজ করে যাচ্ছি। আর এর মধ্য দিয়ে একটি খ্রিস্টান মিশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে আমার প্রত্যাশা হলো আমরা যারা প্রশাসনিক পদে আছি সবাই নিবেদিত জীবনের মানুষ। আমরা আমাদের দায়িত্ব বিশ্বস্তভাবে পালন করি যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে এবং দিন দিন এর শ্রী-বৃদ্ধি ঘটে। অনেক আলোকিত মানুষ জন্ম দিতে পারি; যারা সমাজ ও মানুষের জন্য কাজ করবে। তারা সমাজের পরিবর্তন ঘটাবে এবং সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে: বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা অনেক অবদান রাখতে পারবো। নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অবশ্যই সুন্দরভাবে গ্রহণ করে মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারবে। কেননা তাদের সেভাবেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যারা ইনচার্জ আছেন, উনারা তাদের সেকশনে ভাল মতো পরিচালনা করবেন এবং শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানের আরো স্বনামধারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে। শিক্ষার্থীরা বড় বড় স্বপ্ন দেখবে এবং স্বপ্ন পূরণ করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে।

ময়ূখ: অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও মাধ্যমিক শাখার ইন্চার্জ আপনারা দু’জনই ধর্মযাজক। জড়িত আছেন বনপাড়া মিশনের ধর্মীয় ও অন্যান্য অনেক সেবাকাজে। পাশাপাশি স্বনামধন্য মিশনারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজেও নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ধর্মযাজক হিসাবে শিক্ষাসেবায় আপনাদের জড়িত হবার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু কথা ময়ুখের মাধ্যমে আমরা সকলের সামনে তুলে ধরতে চাই।
অধ্যক্ষ: সেন্ট যোসেফ্স স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও মাধ্যমিক শাখার ইন্চার্জ আমরা দু’জনই ধর্মযাজক। আমরা জড়িত আছি বনপাড়া মিশনের ধর্মীয় ও অন্যান্য অনেক সেবাকাজে। পাশাপাশি স্বনামধন্য মিশনারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজে নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে ধর্মযাজক হিসাবে শিক্ষাসেবায় জড়িত হবার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু কথা ময়ুখের মাধ্যমে সকলের সামনে তুলে ধরতে চাই। আর তা হলো ধর্মযাজক হলো এমন একটি জীবন, যারা অন্যদের মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে এবং অন্যদের সেবায় নিয়োজিত থাকে। যারা যাজক হন তারা ঐশবাণী ও ঐশ অনুগ্রহ দ্বারা মানুষের জন্য খ্রীষ্টের নামে কাজ করেন। ধর্মযাজক হলো সেবাধর্মী। ধর্মযাজকীয় জীবন মানুষের মঙ্গল সাধনের জন্য স্থাপিত হয়েছে। কেননা যাজকগণ নিজেদের জীবন ও প্রার্থনা ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করেন। ধর্মযাজক সবার মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করেন এবং সবার মধ্যে মিলন ও ভ্রাতৃত্ববোধ যেন বজায় থাকে সেজন্য কাজ করেন। সবার মঙ্গল সাধন করা যাজকের একটি পবিত্র দায়িত্ব। শিক্ষাসেবা করা যাজকের কাজ। শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে কুসংস্কার দূরীভ‚ত হয় এবং মানুষ শিক্ষা লাভ করে উন্নত জীবন যাপন করে। জ্ঞানের আলো জ্বেলে জীবনের অন্ধকার দূর করে এবং মানুষের মঙ্গল সাধন করে। তাই ধর্মযাজক হয়ে শিক্ষাসেবায় জড়িত হবার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের সুন্দর ও আলোকিত মানুষ করা যেন শিক্ষার্থীরা আমাদের ধর্মযাজকদের সেবা ও ভালবাসায় আরো সুন্দর মানুষ হয়ে উঠে। তাছাড়া আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন সুন্দরভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম অক্ষুন্ন থাকে। সর্বোপরি যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হলো সেই উদ্দেশ্য যেন পূরণ হয় অর্থাৎ অত্র এলাকার জনগণ যেন সুশিক্ষিত ও আলোকিত মানুষ হয় সেজন্য আমরা ধর্মযাজকগণ মিশন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত হয়েছি। অবশ্য তা শুরুতেও ছিল এবং সময়ের প্রয়োজনে পুনরায় সে ধারায় ফিরে এসেছে।
ময়ূখ: বর্তমানে সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজ একটি সু-বৃহৎ শিক্ষা পরিবার। সু-বিস্তৃত এর কর্মযজ্ঞ। এর প্রাণ হলো আমাদের শিক্ষার্থীরা। নিশ্চয় তাদের ঘিরে আপনার অনেক স্বপ্ন। যদি কিছুটা সহভাগিতা করতেন…!

অধ্যক্ষ: শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানতুল্য। প্রতিজন শিক্ষার্থীকে সন্তানের মতো ভালবাসি এবং জ্ঞানের আলো জ্বেলে আলোকিত করি যেন আমাদের কোন সন্তান আর অন্ধকারে হারিয়ে না যায়। তারা যেন ভাল ও আলোকিত মানুষ হয়ে দেশ ও দশের সেবা করে। আমরা চাই তারা যে স্বপ্ন নিয়ে সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষালাভ করতে এসেছে, তাদের স্বপ্ন যেন পূরণ হয়। জীবনে তারা যেন সফল মানুষ হতে পারে, সেজন্য আমরা কাজ করি। আমাদের সন্তানেরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে, সুনাগরিক হবে, আলোকিত মানুষ হবে, দেশের সেবা করবে, জীবনের স্বপ্ন পূরণ হবে, এটাই আমাদের চাওয়া, আর এজন্যেইতো এই বিশাল কর্মযজ্ঞ।

ময়ূখ: শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার ঘটান আমাদের নিবেদিত-প্রাণ শিক্ষকবৃন্দ। শিক্ষা, অনুপ্রেরণা ও জীবনের আদর্শ দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সকল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেন। উনাদের প্রতি আপনার অভিব্যক্তি প্রত্যাশা করছি।
অধ্যক্ষ: আমাদের সকল শিক্ষকই নিবেদিত এবং দায়িত্বশীল। তারা মিশনারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিজেকে ধন্য মনে করেন। কেননা এখানে উনারা নিজেদের উজাড় করে দিতে পারেন, সেই শিক্ষার পরিবেশ আছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থী সন্তানতুল্য মনে করে শিক্ষা দিয়ে জ্ঞানে-গুনে বড় করে তোলেন এবং একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো দান করেন। শিক্ষকদের আদর্শে ও অনুপ্রেরণায় শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করে এবং একজন ভাল ও আলোকিত মানুষ হবার জন্য সর্বদা চেষ্টা করে। তাছাড়া শিক্ষকগণ শিক্ষা, অনুপ্রেরণা ও জীবনের আদর্শ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সফলতা ও স্বপ্ন পূরণের দ্বার উন্মোচন করেন। এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষকদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

ময়ূখ: আমরা জাানি যে, বর্তমান সংকটময় পারিপ¦ার্শিক বাস্তবতায় অভিভাবকবৃন্দ অনেক বিশ^াস ও আস্থা নিয়ে তাদের সন্তানদের আমাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, নীতি-নৈতিকতা ও মানবিকতার আদর্শে একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে তুলতে গিয়ে অভিভাবকদের কাছে থেকে, আমরা সাধারণত অনেক সহযোগিতা পেয়ে থাকি। তবে অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা অবহেলা ও দায়িত্বশীলতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে অভিভাবকগণ বাড়িতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে কিভাবে আরও বেশি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারেন সে বিষয়ে কিছু দিক নির্দেশনা আশা করি…।

অধ্যক্ষ: শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও গর্ভনিং বডির সদস্যগণ সবাই মিলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হয়। শুধুমাত্র শিক্ষকগণ যদি শিক্ষার কাজে জড়িত থাকে, তাহলে শিক্ষার্থীদের সুন্দরভাবে শিক্ষা দেওয়া যায় না। এখানে অভিভাবকদের জড়িত হতে হয়, নইলে শিক্ষার কাজ ব্যাহত হয়। তাই বর্তমান সংকটময় পারিপ¦ার্শিক বাস্তবতায় অভিভাবকগণ বিশ^াস নিয়ে তাদের সন্তানদের আমাদের হাতে তুলে দেন। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, নীতি-নৈতিকতা ও মানবিকতার আদর্শে একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে তুলতে গিয়ে অভিভাবকগণ সহযোগিতা করেন। তবে এক্ষেত্রে যদি তারা অবহেলা করেন বা দায়িত্ব পালন না করেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের কাজ আরো কঠিন হয়ে পড়বে। সেজন্য অভিভাবকদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরো বেশী জড়িত হতে হবে এবং তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। তবেই শিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।

ময়ূখ: করোনার কারণে ময়ূখ বিগত দু’বছর প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তা অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি হয়ে নিজের উপস্থিতি প্রকাশ করছে। সব শেষে ‘ময়ূখ’ সম্পর্কে আপনার কিছু কথা জানতে চাচ্ছি।

অধ্যক্ষ: সেন্ট যোসেফস্ স্কুল এন্ড কলেজের বাৎসরিক মুখপত্র হলো ময়ূখ। ময়ুখের মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। লেখালেখির মাধ্যমে তারা সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল হয়ে উঠে। মনের অভিব্যক্তি, মনের কথা, স্বপ্ন, বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প প্রভৃতি লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ করে। ময়ূখ আমাদের আয়না, প্রতিচ্ছবি, যার মধ্যে হাজারো স্বপ্ন বিকশিত হয়। ময়ূখ চিরদিন নিজস্ব সৃষ্টিশীলতায় কলেবরে প্রকাশিত হয়ে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবে এবং তার আলোতে হাজারো মানুষকে আলোকিত করবে বলে প্রত্যাশা করি।

ময়ূখ: আপনার স্বপ্ন ও এগিয়ে চলার বিষয়ে অনেক কথা আমরা মযুখের মধ্য দিয়ে আমরা জানতে পারলাম। আশা করি, এগুলো জানার মধ্য দিয়ে অনেকেই অনেকভাবে উপকৃত হবে। আপনার সময় ও সুচিন্তিত অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য ময়ুখের পক্ষ হতে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
অধ্যক্ষ: ধন্যবাদ ময়ূখের নেপথ্যে জড়িত সবাইকে।